আবুল কাসেম আশরাফ 

তরুণ প্রজন্ম একটি দেশের বড় সম্পদ।অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষার স্বপ্ন থাকে তাদের নিয়ে।যারা এই সম্পদ যত বেশি ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারে, জাতি হিসেবে তারা তত বেশি সফলতা লাভ করে।এই কারণেই দেশের ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে তরুণ সমাজের প্রতি বিশেষভাবে নজর রাখতে হয়। তরুণরা যে চিন্তা ও মনন নিয়ে বেড়ে উঠে, সেটিই একদিন জাতীয় চরিত্র হয়ে দাঁড়ায়।তারুণ্যের শক্তিই পারে নব যুগের সূচনা করতে।সেজন্যই যুগে যুগে মানুষের মুখে ধ্বনিত হয় তারুণ্যের জয়গান।

বহমান নষ্ট সময়ে জাতি শঙ্কিত। বিবেক স্তব্ধ। মানবতা শিকলবন্দী। চারদিকে অসত্যের ছড়াছড়ি। এসব নিয়ে খুব একটা ভাবনা নেই কারো। পত্রিকার রঙিন পাতায় যখন কোনো নারকীয় হত্যাযজ্ঞের ছবি চোখে পড়ে,মনটা তখনই ভারাক্রান্ত হয়।পরদিন যখন এর চেয়ে আরো পৈশাচিক কোনো ঘটনায় চোখ আটকে যায়,তখন আগের দিনের ঘটনাটি মামুলি বলে মনে হতে থাকে। এভাবেই একদিন কোনো ঘটনাই আর হৃদয়ে দাগ কাটে না। অপরাধের সাথে বাস করতে করতে মানুষ একদিন অপরাধকে স্বাভাবিক বলে মেনে নেয়।এই স্বাভাবিকতাই জাতি ধ্বংসের অন্যতম কারণ।

অপরাধীরা সংখ্যায় কম হলেও তারা সুসংগঠিত। এদিকে ভালো মানুষদেরই কোনো একতা নেই।
শুধু এসব কারণেই অন্যায়ের কাছে ন্যায় পরাজিত। প্রতিবাদী মানুষগুলো বধির হয়ে গেছে। হারিয়ে ফেলেছে প্রতিবাদের ভাষা। যে সত্য সময়ের প্রয়োজনে হুঙ্কার তুলতে পারে না,সে সত্য মানুষের কোনো কাজে আসে না।এরূপ সত্যবাদীরাই এখন ধ্বংসের প্রতিচ্ছবি হয়ে সমাজের গায়ে আষ্টেপৃষ্ঠে লেগে আছে। মানবতার হাহাকার উপেক্ষা করে নিজেদের ভদ্র পরিচয় দিয়ে এরা সুখ পায়।তখনই সেই সমাজ আর মানবতার সমাজ থাকে না।
তাহলে কি আমরা ভবিষ্যতে অমানবিকতার দিকে এগিয়ে চলেছি?এইভাবে আজ হাজারো প্রশ্ন হৃদয়ে ঘুরপাক খাচ্ছে।
যে সমাজে স্বীকৃত বখাটে, যে কাউকে পেটায়, কাউকে জীবননাশের হুমকি দেয়।মানুষের আকর্ষণ তার দিকে।অনেকে তাকে দলে ভেড়াতে চায়। একসময় সে যে কারো আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে একটি সামাজিক অবস্থানে দাঁড়িয়ে যায়। এই হলো তার বড় হয়ে ওঠার কাহিনী।তখনই মানবতা নিভৃতে কাঁদে। ভদ্ররা এসব মুখ বুজে সহ্য করে। কারণ তারা ভদ্র। একদিনও সে আর মুখ খুলতে পারে না। যেদিন তার শক্তি -সামর্থ্য ছিল ছিল, চাইলে কথা বলতে পারত, তখন অন্যায়কে বেড়ে ওঠার সুযোগ করে দিয়েছে।

আজ পল্লীগাঁয়ে সমাজের এই নব পরিবর্তন যে হারে বেড়ে চলেছে,তা হয়তো অচিরেই বড় অশুভ পরিণতি নিয়ে আসবে। সন্ত্রাসীর পরিচয় সন্ত্রাসী। কর্তৃত্বের জায়গায় সে আসন করে নিতে পারলে সেখানেও সে ত্রাস ছড়াবে।এদের দৌরাত্ম্যে পাড়াগাঁয়ের সামাজিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়তে বসেছে। তরুণ সমাজকে তারা নেশায় বুঁদ করে রেখেছে।তারা সর্বত্র এই অশান্তি ছড়িয়ে দিয়েছে। সংসারের শান্তি বিনষ্ট করছে। সম্ভাবনাময় মেধাবী মুখগুলো ভুল পথে পা বাড়াচ্ছে। কোথাও কোথাও প্রকাশ্য দিবালোকে এসব চলছে। এরা একদল অসৎ মানুষের ছত্রছায়ায় বেড়ে উঠছে। এই আগাছাকে ছেঁটে সমাজকে পরিচ্ছন্ন করা প্রয়োজন,নইলে এরাই একদিন সমাজের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। হারিয়ে যাবে সম্ভাবনাময় হাজারও তরুণ। তাইতো এখনই আগামী প্রজন্মের যত্নের সময়।


সহকারী শিক্ষক,খরুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয় ,খরুলিয়া, সদর, কক্সবাজার।